পুঁজিবাজারে এক বছরের বেশি সময় ধরে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে, পুঁজিবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেকটাই কমেছে। এতে চলতি বছরে বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খোলার পরিমাণ ৮.৭১ শতাংশ কমেছে। বছরজুড়ে পুরুষদের পাশাপাশি নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। বছরজুড়ে নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যাও কমেছে।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ২০২০ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তথা শেয়ারবাজারের হাল ধরেন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে বিএসইসিতে যোগ দেন সাবেক শিল্প সচিব আব্দুল হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দীন আহমেদ এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশনস সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। বিএসইসিতে যোগ দেওয়ার এক বছরের মধ্যে নতুন এই কমিশনের উদ্যোগী কর্মকাণ্ড ও কর্মতৎপরতায় শেয়ারবাজারে গতি ফিরেছে। একই সঙ্গে হারোনো আস্থা ফিরে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে, ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুঁজিবাজারে পতনমুখী প্রবণতা দেখা দেয়। এর পর চলতি বছরের শুরু থেকে বৈশ্বিক মন্দাসহ বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা মাথাচাড়া দেয়। চলতি বছরের শেষ সময় পর্যন্ত এ অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি পুঁজিবাজার।

বাজারের পতনমুখী প্রবণতাসহ বিভিন্ন কারণে চলতি বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিও হিসাব খোলার পরিমাণ ৮.৭১ শতাংশ কমেছে। পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব খোলার পরিমাণ কমেছে ৮.১৭ শতাংশ। নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব খোলার পরিমাণ কমেছে ১০.৪০ শতাংশ।

পুঁজিবাজারের তথ্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২ জানুয়ারি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ২০ লাখ ১৯ হাজার ১৮৭টি। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ১৯৫টি। সে হিসেবে বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯২টি বা ৮.৭১ শতাংশ।

চলতি বছরের ২ জানুয়ারি একক বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৫২টি। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত একক বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৮২ হাজার ১৬৪টি। সে হিসেবে একক বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৯২ হাজার ১৮৮টি বা ৬.৭১ শতাংশ।

চলতি বছরের ২ জানুয়ারি যৌথ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৫টি। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত যৌথ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬১ হাজার ৩১টি। সে হিসেবে যৌথ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৮৩ হাজার ৮০৪টি বা ১৩ শতাংশ।

চলতি বছরের ২ জানুয়ারি পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ১১ হাজার ৮২৬টি। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৯টি। সে হিসেবে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ১ লাখ ২৩ হাজার ২৫৭টি বা ৮.১৫ শতাংশ।

চলতি বছরের ২ জানুয়ারি নারী বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৭ হাজার ৩৬১টি। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬২৬টি। সে হিসেবে নারী বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ৫২ হাজার ৭৩৫টি বা ১০.৩৯ শতাংশ।

চলতি বছরের ২ জানুয়ারি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব ছিল ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৮২৬টি। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৮০ হাজার ২০৬টি। সে হিসেবে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব কমেছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৬২০টি বা ৭.৯০ শতাংশ।

চলতি বছরের ২ জানুয়ারি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাব ছিল ৮৬ হাজার ৩৬১টি। ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৯৮৯টি। সে হিসেবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা কমেছে ২৩ হাজার ৩৭২টি বা ২৭.০৬ শতাংশ।

তবে, বছরজুড়ে নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের পরিমাণ কমেছে। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ২০৮টি। এ বছরের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ২১টি। সে হিসেবে নিষ্ক্রিয় বিও হিসাবের পরিমাণ কমেছে ৪২ হাজার ১৮৭টি বা ৩৫.৯৯ শতাংশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here